সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১; ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ
জাতিসংঘের প্রথম কৃঞ্চাঙ্গ ও সপ্তম মহাসচিব কফি আনান আজ ১৮ আগস্ট, ২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে বিদেয় নিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল, আফ্রিকার ঘানার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কুমাসিতে। আনান ২০০১ সালে জাতিসংঘের সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন।
কফি আনান জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোল্ড কোস্ট (বর্তমান ঘানা) এর সবেচেয়ে প্রভাবশালি ফান্টে পরিবারে যারা ঐতিহ্যগতভাবে গোত্রপ্রধান ছিলেন। আনানের বাবা ছিলেন দেশটির একজন প্রাদেশিক গভর্নর। কফি আনানের স্কুলিং শুরু হয় কেপ কোস্টের মেথোডিস্ট বোর্ডিং স্কুলে আনানের মতে যেখান থেকে তিনি শিখেছিলেন – “suffering anywhere concerns people everywhere”। আনানের সারা জীবনের কর্ম এবং দর্শনে এই শিক্ষার যথার্থই প্রতিফলন হয়েছে বলা যায়।
১৯৫৮ সালে ঘানার কাউমি নক্রুমা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে অর্থনীতি পড়ার জন্য ভর্তি হন।পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকালেস্টার কলেজে গমন করেন এবং সেখান থেকে স্নাতক সমাপ্ত করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬২ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গ্রাজুয়েট ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১-৭২ সালে তিনি এমআইটি’র স্লোয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের ‘স্লোয়ান ফেলো’ প্রোগ্রামের অধীনে ম্যানেজমেন্টে মার্স্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাজেট অফিসার হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ এই দুই বছর তিনি ঘানার পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি জেনেভাস্থ জাতিসংঘ রিফ্যুজি কমিশনের পার্সোনেল প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউ ইয়র্কে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন দায়িত্বে কর্মরত থেকে ১৯৯৭ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে জাতিসংঘের সপ্তম মহাসচিবের দ্বায়িত্ব নেন কফি আনান।
জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালে ইরাক যুদ্ধ ও এইডস মহামারি- এ দুটি সংকটে পড়েছিল বিশ্ব। মহাসচিব থাকা অবস্থায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন আনান। দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই তিনি জাতিসংঘকে পুনর্গঠনের জন্য সুপারিশ করেন। ২০০৫ সালের সাধারণ সভায় তিনি সিকিউরিটি কাউন্সিল বিবর্ধিতকরণের সুপারিশ করেন। তাছাড়া আনান প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ যেটিকে সংক্ষেপে এমডিজি গোল বলে আখ্যায়িত করা হয়।
২০০৩ সালে ইরাকে যৌথ বাহিনীর আগ্রাসন নিয়ে স্পষ্টভাষী ছিলেন আনান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যাতে জাতিসংঘের সম্মতি ছাড়া ইরাকে আগ্রাসন না চালান। ২০০৪ সালে মহাসচিব থাকা অবস্থায়ই বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরাক যুদ্ধকে জাতিসংঘের চার্টারের সাথে সাংঘর্ষিকে এবং অবৈধ যুদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদের জেরে অবশেষে ২০০৬ সালে পদত্যাগ করেন।
বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন কফি আনান। কেনিয়ার রাইলা ওডিঙ্গা ও মাওয়াই কিবাকির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতেও মধ্যস্থতা করেছিলেন কফি আনান। সিরিয়া যুদ্ধে তাকে বিশেষ দূত নিয়োগ দেয় জাতিসংঘ ও আরব লিগ। এ ছাড়া মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গঠিত আন্তর্জাতিক কমিশনের নের্তৃত্ব ছিলেন আনান। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুপারিশ করা এ কমিশন পরিচিতি পায় ‘আনান কমিশন’ হিসেবে।
২০০১ সালে পান নোবেল শান্তি পুরস্কার। নোবেল পুরস্কারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘের পুনরুজ্জীবন এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা। তাছাড়া আফ্রিকায় এইচআইভি ভাইরাস মোকাবেলা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকেও নোবেল কমিটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখে।
সর্বাধিক পঠিত
Our facebook page