বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২২; ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ
বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন সময় আমরা ভারত কে গালিগালাজ করি কারনে বা অকারনে । তাদের বিভিন্ন বৈদেশিক নীতি এমনকি অনেক সময় তাদের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নিয়ম নীতি নানা রকম সমলোচনার সম্মুখীন হয় । যেমন কয়েক দিন আগে পরকীয়াকে বৈধতা দেওয়া একটা আইন তোপের মুখে পরেছে । তেমনি বিভিন্ন সময় তাদের নেওয়া বিভিন্ন বৈদেশিক নীতি সমালোচনার মুখে পড়ে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করে মনে হয় তার নিজের প্রতিবেশীরাই । তবে তার প্রতিবেশীরা কি কখনো দেখার চেষ্টা করেছে ভারত কীভাবে তার নীতিগুলোকে দেখে ? কীভাবে সে তার কার্যক্রমগুলোকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে ?
ভারতের বিশাল আয়তন এর প্রতিবেশীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করে কারন বৃহৎ প্রতিবেশী কেউ ভালোবাসে না । এটা শুধু ভারত ও তার প্রতিবেশীদের জন্যই প্রযোজ্য তা নয় । এটা অন্যান্য রাষ্ট্র গুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ৷ কেউ বোধহয় মেক্সিকোর মানুষজনকে জিজ্ঞেস করলেই হবে সে আমেরিকাকে কীভাবে দেখে আবার ইউক্রেন কে জিজ্ঞেস করলেও হবে সে রাশিয়াকে নিয়ে কী ভাবে এবং দুই ক্ষেত্রেই যেটা জানা যাবে সেটা হলো বৃহৎ প্রতিবেশীর পাশে থাকা আসলেই মনে আশংকার সৃষ্টি করে ৷
তবে তাদের এই যুক্তি যে ভ্রান্ত এতো সহজেই অনুমেয় । কারন বৃহৎ প্রতিবেশী হয়ে চীন তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর সাথে যেভাবে সম্পর্ক রক্ষা করছে আসলে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এবং এই জায়গাটাতে বলা যায় ভারত ব্যর্থ হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে বলেছিল ভারতের নিয়তি তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা তাই যতদিন পর্যন্ত ভারত এটা উপলব্ধি না করবে ততদিন ভারতের ভাগ্যের কোন উন্নতি হবে না ।
প্রতিবেশী এই রাষ্ট্র গুলোর ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই দেখা যায় তারা ভারত দিয়ে আবদ্ধ অথাৎ তাদের একমাত্র প্রতিবেশী শুধু ভারত তাই এই সব রাষ্ট্র গুলোর চাওয়া পাওয়া সব সময়ই ভারতের কাছে বেশি থাকে এবং একই সাথে একটা ভীতিও থাকে তারা ভারত দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হচ্ছে না তো । দিনের পর দিন আরেকটা ভারত হয়ে যাচ্ছে না তো তাদের দেশ । তাই ভারতের প্রতিবেশী দের প্রথম চেষ্টাই থাকে কীভাবে নিজেকে অভারতীয় প্রমান করা যাবে । কীভাবে ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে নিজেদের পরিচয় রক্ষা করা যাবে ।
তবে উপমহাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এখন পযর্ন্ত বেশ ভালো রকমের উন্নতি হয়েছে তা বলা যায় নেপালের গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়েছে এবং নেপাল কোয়ালিশন সরকার গঠনে সমর্থ হয়েছে ৷ ভুটানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আদলে নির্বাচনও হচ্ছে ৷ সাংবাধানিক রাজতন্ত্র সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ বাংলাদেশে সেনা শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সিভিলিয়ান শাসিত সরকার ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে ৷
শ্রীলংকাতে শ্রীলংকান বাহিনীর হাতে তামিল টাইগাররা পরাজিত হয়েছে এবং ক্রমাগত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে । ২০১২ সালে মালদ্বীপে একটা রক্তপাত ছাড়া অভ্যুত্থান হয়েছে আর এতে ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট থেকে ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর হয়েছে । এমনকি মায়ানমারও কিছু নির্বাচন করেছে যদিও এসব নির্বাচনের বেশিরভাগই বির্তকিত । উপরের উদাহরণগুলো থেকে বুঝা যায় ধীরে ধীরে দক্ষিন এশিয়া শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে ৷
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির সুবাতাস বইলেও ভারতের সাথে এবং ভারতের কারণেই বোধ হয় বেশ কিছু অশান্তির যেন অবসান ঘটছেই না।
ভারতের তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে প্রধান কিছু সমস্যা আছে যা সম্পর্ক উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে ৷ যেমন ভারত প্রায় সময়ই নেপালের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে যা নেপালের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন । তেমনি বাংলাদেশের সাথে সমস্যা তখন থেকে শুরু হয় যখন থেকে ভারতের বর্ডার গার্ড নিরাপরাধ বাংলাদেশীদের সীমান্তে হত্যা করতে থাকে ।
পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্ক সেই ১৯৪৭ সালের পর থেকেই টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । কাশ্নীর ইস্যু দুই দেশের মধ্যে তো এখনও বিবাদের অপর নাম এবং এই ইস্যুটার অদৌ কোন সমাধান হবে বলে জানাও যায় না । তাই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অদূর ভবিষ্যতে অদৌ ঠিক হবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না । এছাড়াও ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক কি হবে তা অনেক সময় আমেরিকা এবং চীন ঠিক করে দেয় অথাৎ এই দুটি দেশ ভারত পাকিস্তান সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব রাখে ।
গত কয়েক শতাব্দীতে দক্ষিন এশিয়ার অনেক উন্নতি হয়েছে একথা বলাই যায় । শুধু অথর্নৈতিক উন্নতি নয় দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক , রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চরম উন্নতি হয়েছে । তবে কিছু প্রতিবন্ধকতা তো রয়েই গেছে যেমন ক্ষুধা, দারিদ্র্য , অর্থনৈতিক মন্দা দক্ষিণ এশিয়াকে এখনও ছেড়ে যায় নি । তাই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বৈদেশিক নীতি এর প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য খুবই গূরত্বপূর্ণ কারন ভারতের বৈদেশিক নীতির দ্বারা এসব দেশের অভ্যন্তরীণ নিয়ম নীতিও অনেক প্রভাবিত হয় ।
যদিও চীন তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে তবে এখনকার সময়ে দেখা যায় যে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন আর তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে এক ধরনের টানা পোড়নের সৃষ্টি হয়েছে । যখন এই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তখন ভারতের দরকার ছিলো কার্যকরী এবং শক্তিশালী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা আর ভারত ঠিক এই জায়গাটিতে তার প্রতিবেশীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ।
১৯৯৬ সালে গুজরাল চুক্তি বা নীতিমালা ভারতের জন্য ছিলো একটা ভালো এবং কার্যকরী পদক্ষেপ এ কথা তো জোর দিয়েই বলা যায় ৷ গুজরাল চুক্তির মূল কথাই ছিলো কীভাবে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক কে সমৃদ্ধি এবং শান্তির পথে নেওয়া যায় । গুজরাল নীতিমালার পর থেকেই মূলত ভারত পদক্ষেপ নেয় তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের শপথ নেয় এবং সেই পথে ভারত কতটুকু এগিয়েছে তা বলা এখনই মুশকিল । তবে ভারত এখনো যে দাদাগিরির নীতি নিয়ে চলছে তাতে এ পথে যে অনেকদূর হাঁটতে হবে সে কথা হলফ করেই বলা যায় ।
ভারতের নতুন বৈদেশিক নীতি হল Common vision for all আর ভারত তার এই ধারনাটি পুরো উপমহাদেশে প্রচার করতে চায় । ভারত শুধু তার স্থিতিশীল বন্ধুরাষ্ট্র গুলোকে নিয়ে ভাবে তা নয় ভারত তার অস্থিতিশীল রাষ্ট্রগুলোকে নিয়েও ভাবে যেমন আফগানিস্তান ৷ ভারত মনে করে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব আর আফগানিস্তান হতে পারে তার পরর্বতী এবং উপমহাদেশের অন্যতম বানিজ্য অঞ্চল কারন প্রাচীনকাল থেকে আফগানিস্তান ছিলো একটা সমৃদ্ধ বানিজ্য অঞ্চল ৷ আফগানিস্তানে ইতিমধ্যে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়েছে এখন দেখার বিষয় হলো আফগানিস্তানে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পর এর অবস্থা কি হয় ।
ভারত মনে করে তার উত্থান অন্য কোন রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ করে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর জন্য কখনই হুমকির কারন হতে পারে না । ভারত মনে করে তার রয়েছে অধিকার শান্তিপূর্ন রসমৃদ্ধির । তবে ভারতকে শান্তিপূর্ন সমৃদ্ধির জন্য যা করতে হবে তাহলো অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্ররাষ্ট্রগুলোকেও সমৃদ্ধির সুযোগ দিতে হবে । সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনা করে তাই বলা যায় সার্ক বর্তমান সময়ে বেশি মনোযোগ দাবি করে Non Alignment Movement বা জোটবিরোধী আন্দোলনের থেকে এবং বাংলাদেশ ,নেপাল, ভুটানের সাথে সম্পর্ক উণ্ণয়ন বেশি জরুরী ভারতের জন্য ভারত – আমেরিকা পারমাণবিক চুক্তির থেকে কারন আগে ঘর তবে তো পর ।
ভারতের জন্য মনে হয় সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকে না গিয়ে বহুপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা কারণ ছোট রাষ্ট্র গুলো সব সময়ই বড় রাষ্ট্রগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং মনে করে দ্বি পাক্ষিক বাণিজ্যে তাদের ক্ষতি হবে । বড় রাষ্ট্র তাকে শোষণ করবে ।ভারতের নেওয়া Look East policy একটি কাযর্কর পদ্ধতি হতে পারে এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের মান বৃদ্ধির জন্য ।
ভারত নিজেকে ইতিমধ্যে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছে কিন্ত গ্লোবাল পাওয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার সাথে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রেগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন বিশেষ করে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা আরো বেশি প্রয়োজন । প্রতিবেশীদের সহযোগিতা ছাড়া বৈশ্বিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব এ কথা সহজেই অনুমেয় ।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গুরু নানকের একটা উক্তি খুব প্রাসঙ্গিক – গুরু নানক একবার বলেছিলেন উচু গাছের মুখাপেক্ষী না হয়ে তুমি বরং নীচু হও কারণ উচু গাছ হয়তো তোমাকে রেখে চলে যাবে অথবা তার পাতা মলিন হয়ে যাবে কিন্ত ঘাস তো সব সময়ই চির সবুজ থাকবে । তেমনি বলা যায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বন্ধুত্বের পালাবদল তো হতেই থাকে কিন্ত প্রতিবেশী ছোট অথবা বড় হোক সব সময় প্রতিবেশীই থাকে ।
সূত্র : শশী থারুরের “A Tough Neighbourhod” এর আংশিক ছায়া অবলম্বনে।
Sanjida Bary is a Postgraduate from the Department of International Relations, University of Dhaka. She loves Novel, Animation movie and English music particularly die hard fan of Westlife and Pink flyod also a art enthusiastic. She basically fight for her every dream because she does’t know which one let you go make her complete. Currently she is working at International Labor Organization – (ILO), Dhaka Regional Office.