সর্বাধিক পঠিত
মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২১; ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ
সরকারের সর্বোচ্চ কর্তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদে ঘোষণার সাথে সাথেই শেষ হতে পারত কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। কারণ অস্পষ্টতা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ। আন্দোলনকারীরা অপেক্ষা করছেন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের। সে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকলেও ভাবার উপায় নেই আন্দোলনের ইতি ঘটেছে।
সরকারী যেকোন সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা কেবল প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সংগঠিত হয়। যেকোন সময় সরকার যখন কোন জটিল বিষয় সমাধান করেন তখন প্রজ্ঞাপন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা প্রজ্ঞাপনই রাষ্ট্রের প্রশাসনের ভাষা, কোন আশ্বাস কিংবা বক্তৃতা বিবৃতি নয়। কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি এখনো প্রজ্ঞাপন আকারে জনসমক্ষে আসেনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের এযাবতকালের জাতীয় লেভেলে যে কোন আন্দোলনের চেয়ে অহিংস আন্দোলন। এ আন্দোলন বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে এই মোমেন্টামে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা সাইকেল মিছিল, ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি, সার্টিফিকেট গলায় ঝুলানোর মতো কর্মসূচী করেছে। মেয়েদের হলে হলে আন্দোলনকারীদের জন্য জলখাবারের ব্যবস্থা করেছে আর মেয়েরা যখন হলে আক্রান্ত হয় তখন ছেলেরা হল ঘেরাও করেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর যখন পুলিশ চড়াও হয় তখন লাল গোলাপ হাতে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। সভ্য দেশের সুসভ্য নাগরিকের মতো অভিনব আচরণ ছিল আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
অথচ এই সংস্কার শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নয় বরং জনপ্রশাসনের স্বার্থে সরকারকে নিজ থেকেই করা উচিত ছিল। বর্তমান ৫৬ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে আর ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই শুধু বঞ্চিত হচ্ছেন না, জনপ্রশাসনও দিনদিন দূর্বল হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তি ড. আকবর আলি খান প্রশাসন থেকেই কোটা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এর জন্য কমিশন করেছিলেন যার সুপারিশ কখনোই সরকার আমলে নেয়নি। আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছে চাকুরির সুযোগের জন্য। এ কী প্রহসন নয় যে সরকার দক্ষ আমলার খোঁজ করে যাচ্ছেন আর অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন কিন্তু এক অদৃশ্য বাধা এই দুইয়ের মিলন ঘটাতে দিচ্ছে না।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীগণ কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন, বাতিলের দাবি করেননি। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কোটা থাকার বিধান ছাত্রসমাজের অন্যতম দাবিও বটে। তাই এই আন্দোলন কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়। এটি বাংলাদেশকে এবং এর প্রশাসনকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আন্দোলন। আজকে হয়ত ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিরা এটা টের পাচ্ছে না, কিন্তু আগামীদিনের বাংলাদেশের ইতিহাস এ আন্দোলনকে উচ্চকিত প্রশংসায় মূল্যায়ন করবে কোন সন্দেহ নেই।
সরকার যদি মনে করে থাকে মহান মে দিবস, পবিত্র শবে বরাত, বুদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি মিলে এক সপ্তাহের বেশি সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এবং পরবর্তীতে মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজান শুরু হলে আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়বে তাহলে সেটা হবে এক মহাভুল। কারণ এই আন্দোলনের ধরণ ও গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আন্দোলনকারীরা যেকোন মূল্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। অভিনব ও স্মার্ট কর্মসূচী দিয়েছেন। তাই কোন বাধা, কোন হিসেব-কিতেবই এই আন্দোলনের স্পিরিটকে দমাতে পারবে না।
এ আন্দোলন শেষ হতে পারে কেবল সরকারের প্রধান ও আমলাতন্ত্রের নেতৃত্বের প্রাজ্ঞ ভূমিকার মাধ্যমে। একটা একটা যৌক্তিক সংস্কার ছাড়া শিক্ষার্থীরা ফিরে যাবে না। তাঁদের অনেক সহপাঠী এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা তাঁদের সহকর্মীদের এ ত্যাগ ভুলে যাবে না।
সর্বাধিক পঠিত
Our facebook page