সর্বাধিক পঠিত
বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২১; ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ
শিরোনাম দেখে কাকতালীয় মনে হতে পারে কিন্তু এটি একটি ফ্যাক্ট। তবে এমন নয় যে কেবল এই সালগুলোতেই মহামারী(ইপিডেমিক) বা অতিমারী(প্যানড্যামিক) ঘটেছে। বরং প্রতি শতাব্দীতেই একাধিক মহামারীর ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেছে।
গত তিনশ বছরে নিয়ম করে যে মহামারীগুলো হয়েছে সেগুলো হলো ১৭২০ সালে প্লেগ, ১৮২০ সালে কলেরা, ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু। চীন থেকে শুরু হওয়া বর্তমান করোনোভাইরাসটিকে ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যানডেমিক বা অতিমারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই মহামারীটিও উল্লিখিত মহামারীগুলোর মতো একই ধাঁচ অনুসরণ করেছে। ইতিহাস সত্যিই নিজেকে পুনরাবৃত্তি করেছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসটি প্রকৃতিতে জন্ম হয়েছে নাকি মানুষের অনুজীববিজ্ঞান গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। যদিও বিশ্বের মেইনস্ট্রিম সংবাদমাধ্যমগুলো এটিকে প্রকৃতিসৃষ্ট ভাইরাস হিসেবেই আখ্যা দিয়েছে।
মহামারীগুলির ইতিহাস কি বলে
বুবোনিক প্লেগ ইউরোপে কয়েক শতাব্দীকাল ধরে টিকে ছিল। ১৩৪৭ সালে প্রথম বড় বুবোনিক প্লেগ সংক্রমণ ঘটে যেটিকে ব্ল্যাক ডেথ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ১৭২০ সালে সর্বশেষ যে বুবোনিক প্লেগের সংক্রমণ ঘটে সেটি বৃহৎ আকারের মহামারী ছিল, এটিকে মার্সেইয়ের দুর্দান্ত প্লেগও বলা হয়। রেকর্ডগুলি দেখায় যে ব্যাক্টেরিয়া মার্সেইলে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা গেছিলো । ধারণা করা হয় যে এই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামিত মাছি দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে।
থাইল্যান্ডে কলেরা মহামারী প্রথম ধরা পড়েছিল ১৮২০ সালে , ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে সহ এশিয়ার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮২০ সালে এই জীবাণুটির কারণে এশিয়ায় ১ লাখ এরও বেশি মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৮২০ সালের মহামারী দূষিত নদীর পানি খাওয়ার কারণে শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়।
১০০ বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু দেখা দিয়েছিল, সেই সময় লোকেরা H1N1 ফ্লু ভাইরাসের সাথে লড়াই করছিল। ক্রমাগত স্প্যানিশ ফ্লু জিনগত ভাবে পরিবর্তন হতো যার ফলে ভাইরাসটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছিল। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং বিশ্বের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো। ১৯২০ সালের মহামারীটি ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ছিল।
দেখে মনে হয় ইতিহাস প্রতি ১০০ বছর পরে নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে , এটি কি কেবল কাকতালীয় ঘটনা?
চীন হওয়া এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসটি ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। দুনিয়াজুড়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারস ডট ইনফো’র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় ২৪ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭২৬৩৪ । এর মধ্যে ১৬৩২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ১০১৩২৩ জন।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘরের ভেতরেই থাকতে হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে। সবাই এক রকম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ইতালিতে এখন ঘরে ঘরে কারাগারের মতো অবস্থা। সরকারি নির্দেশে দেশটির সবাই এখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। অবরুদ্ধ ইতালিতে বন্দিজীবনে অলস সময় পার করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। জীবন যেন থমকে গেছে। সুস্থ থাকলেও ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তবে আশার কথা হল চীন ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশটিতে নতুন করে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এর মধ্যে এর ভয়াল থাবা দেখতে শুরু করেছে পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো।
ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭ হাজার ৪৩২ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ওপরের সারিতে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নাম উল্লেখযোগ্য।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইতালির সরকার। বন্ধ রয়েছে স্কুল। স্থগিত করা হয়েছে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। খেলাধুলার অনুষ্ঠান বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। জনসমাগম স্থল এখন পুরো ফাঁকা। ওষুধ ও খাবারের দোকান বাদে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ভ্রমণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে বাবা-মাকে কাছে পাচ্ছে তাদের সন্তানরা। ইউরোপের দেশগুলোতে যে চিত্র খুবই কম চোখে পড়ে। বন্দি অবস্থায় কেমন আছে সেখানকার মানুষগুলো।
করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবমতে এ সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন। ২৪ মার্চ থেকে দেশটির সকল সরকারী বেসরকারী অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতি ১০০ বছরে এমন মহামারীর হয়তো বৈজ্ঞানিক কোন কারণ মিলবে না। তবে এটা স্পষ্ট মানুষের অর্জন কিংবা প্রকৃতির উপর মানুষের আধিপত্যের একটি সীমানা আছে। মানুষ কখনোই প্রকৃতির প্রভু নয়, বরং গোটা খাদ্য শৃঙ্খল ও বাস্তুসংস্থানের অংশমাত্র।
সর্বাধিক পঠিত
Our facebook page