ডাঃ জাফরুল্লাহ বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের হিরো। একই সাথে উনি প্রচণ্ড অমায়িক এবং নিরহংকারী একজন মানুষ। নিজের প্রোফাইল নিয়ে কখনো উনাকে ঢাকঢোল পিটাইতে দেখিনি। সরকার চামচা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে টকশোতে উনাকে অনেকবার হেয় করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ২০১৮র নির্বাচনের আগে ‘তৃতীয় মাত্রা’র এক টক শোতে মোহাম্মদ এ আরাফাত উনার সাথে যে ব্যবহার করছেন সেটা আমি কোনদিনও ভুলতে পারব না। আরাফাত পারলে সেইদিন জাফরুল্লাহকে ক্যামেরার সামনেই চড়থাপ্পড় মারতেন।
জাফরুল্লাহ যুদ্ধের ময়দানের মুক্তিযোদ্ধা বলে উনাকে ট্যাকল করতে এইসব দালালদের ঘাম ছুটে যাইত। কারণ রাজাকার ট্যাগ তো আর উনাকে দাওয়া যায় না। শেষ পর্যন্ত পুকুরের মাছ চুরির মত হাস্যকর অভিযোগে উনাকে জেলখানায়ও নিছে এই সরকার। অথচ শহীদুল আলমকে গ্রেফতারের পর যেমন সমালোচনা হইছে তার কিছুই হয়নি জাফরুল্লাহর গ্রেফতার নিয়ে। পাবলিক রিঅ্যাকশনের এই বৈপরীত্যে আমি তখন খুব কষ্ট পাইছিলাম।
অবশ্য এখন আমি এই বৈপরীত্য কিছুটা বুঝতে পারি। শহীদুল আলমকে দেখছি সবসময় একটা আভিজাত্য নিয়ে কথা বলেন, চলাফেরা করেন। উনি দেশবিদেশের অনেক ফেমাস লোকজনের ছবি তুলছেন। তাই তারা উনাকে ছেড়ে দাওয়ার জন্য তদবির করছেন। এতে পাবলিক বুঝছে শহীদুল আলম তো সেই মাল! উনার গ্রেফতার তো মেনে নাওয়া যায় না। তখন আমাদের জাতির বিবেক জাফর স্যার তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্যের মধ্যেও অনেক কষ্টে একটা কলাম লিখছিলেন। সেইখানে শুধু এইটুকু বলছেন যে উনি কিছু দেখেন নাই, কিছু জানেন না, এমনকি বুঝেনও না। তবে উনি শহীদুল আলমের মুক্তি চান।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে সবচেয়ে বেশী আয় করা বুদ্ধিজীবী হলেন এই জাফর ইকবাল। অথচ জাফরুল্লাহর মত মুক্তিযোদ্ধার গ্রেফতার নিয়ে উনি একটা কথাও বললেন না। আমজনতা তো নাই-ই। কারণ জাফরুল্লাহ তো আর শহীদুল আলমের মত ঠাটবাট নিয়ে চলেন না। এইসব বাহ্যিক গ্লামারের কোন খাওয়া তো জাফরুল্লাহদের মত সৎ মানুষদের কাছে নাই।
আমি ভাবছিলাম এই গ্রেফতারের পর জাফরুল্লাহ বোধহয় কষ্টে অভিমানে এই দেশের মানুষের জন্য আর কিছু করতে যাবেন না। অথচ এই করোনার মত মহামারীর দিনে উনি সবার আগে ঝাঁপায় পড়ছেন। নিজে একজন কিডনীর রোগী। প্রতিদিন দুইবার উনার ডায়ালাইসিস করতে হয়। এর মধ্যেও কোথায় এত শক্তি উনি পান ভাবতে অবাক লাগে।
আফসোস বাংলাদেশের মানুষ জাফরুল্লাহকে চিনে না, চিনে এক কাপুরুষ, দালাল, অন্যের লেখা চুরি করে সাহিত্যিক বনে যাওয়া জাফর ইকবালকে। এই জাতির সৌভাগ্য যে জাফরুল্লাহর মত নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী মানুষরা বিপদে এভাবে নীরবে নিভৃতে দেশের জন্য যুদ্ধ করে যান।