বিশ্বকর্মা পুজোতে নেই আলোর রোশনাই, সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা গেটে এসে আজও প্রণাম করেন শ্রমিকরা

হুগলির সাহাগঞ্জ। একসময় এই নাম উচ্চারণ করা হতো গর্বের সঙ্গে, কারণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিল দেশের প্রথম টায়ার কারখানা— ডানলপ। তখন শ্রমিকরা বুক ফুলিয়ে নিজেদের পরিচয় দিতেন— তাঁরা ডানলপের শ্রমিক। বিশ্বকর্মা পুজো ছিল তাঁদের কাছে দুর্গাপুজোর থেকেও বড় উৎসব। কারখানার চত্বর আলোয় ঝলমল করত, মঞ্চ বাঁধা হতো, বসত মেলা, হত নাটক-থিয়েটার। খাওয়াদাওয়া আর আনন্দে মেতে উঠত গোটা সাহাগঞ্জ।

কিন্তু সেই গৌরব আজ অতীত। এখন মরচে ধরা গেট, আগাছায় ঢাকা কারখানার মাঠ আর নির্জীব মেশিনই সাক্ষী এক ইতিহাসের। শ্রমিক অসন্তোষ, মালিকানার দ্বন্দ্ব আর আর্থিক সংকটে একসময়কার উজ্জ্বল শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে গেটে ঝোলে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস। বন্ধ হয়ে যায় কারখানার কাজ, স্তব্ধ হয়ে যায় মেশিন। শ্রমিকরা বকেয়া, পিএফ, গ্র্যাচুইটির দাবিতে পথে নামেন। মামলা গড়ায় আদালতে। ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে ডানলপ যায় লিকুইডেশনে, নিলামে ওঠে সম্পত্তি।

যেসব পরিবার কারখানার কোয়ার্টারে থাকতেন, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—একদিন হয়তো ফের গর্জে উঠবে কারখানার চিমনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই আশা ভেঙে গেছে। আজ তাঁদের সন্তানরা জানে, যে কারখানায় একসময় প্রজন্মের পর প্রজন্ম জীবিকা পেয়েছিল, তা আর ফিরবে না। সরকারের অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক ভাতা পেলেও তা টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। বেশিরভাগ প্রাক্তন শ্রমিক আজও দিন আনে দিন খেয়ে বেঁচে আছেন।

তাঁদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে বিশ্বকর্মা পুজোর উজ্জ্বল দিনগুলি। তখন কারখানার দরজা খুলে দেওয়া হতো সবার জন্য। সাধারণ মানুষও ঢুকে দেখতেন কেমন করে তৈরি হয় টায়ার। শ্রমিক পরিবার থেকে শুরু করে আশপাশের মানুষ—সবার কাছে এটাই ছিল আনন্দের উৎসব। আজ সেই আলো নেই, বাদ্যের আওয়াজ নেই, নেই উৎসবের রঙ। শুধু অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকরা পুরনো দিনের স্মৃতি নিয়ে ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করেন ভগ্নহৃদয়ে।

One thought on “বিশ্বকর্মা পুজোতে নেই আলোর রোশনাই, সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা গেটে এসে আজও প্রণাম করেন শ্রমিকরা

Leave a Reply to hkkqtzlzzz Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *